একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায়

 একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় - সেরা ৫০ উপায় নিয়ে আমাদের আজকের এই পোস্ট। আশা করছি পোস্টটি পড়লে আপনি একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় তার বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে বরং দেখি একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায়?


একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায়

পরিবার থেকে শুরু করে সকলের মধ্যেই একটি দুশ্চিন্তার বিষয় লক্ষণীয়, তা হচ্ছে কিভাবে দুর্বল ছাত্রের উন্নতি করা যেতে পারে? কিভাবে ভালো ছাত্র হওয়া যায় আমরা ধারাবাহিকভাবে এরকম ৫০টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

পেজ সূচীপত্রঃ ভালো ছাত্র হওয়ার সেরা উপায়

কিভাবে দুর্বল শিক্ষার্থী সনাক্ত করা যায়?

মেধা কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা কমবেশি সবার মাঝেই দিয়েছেন। কেউ সেই মেধাকে শতভাগ কাজে লাগিয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারে। আবার কেউ সঠিক গাইডলাইন এর অভাবে সেই মেধাকে বিকশিত করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।

একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় জানার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই দুর্বল শিক্ষার্থী সনাক্ত করতে হবে। তাহলে বলুন তো কিভাবে আপনি একজন দুর্বল শিক্ষার্থীকে সনাক্ত করবেন? এ পর্যায়ে আমরা দুর্বল শিক্ষার্থী সনাক্ত করার উপায় নিয়ে কথা বলবো। দুর্বল শিক্ষার্থী তারা-
  • মেধা থাকা স্বত্তেও যারা ক্লাস করার প্রতি অনাগ্রহী।
  • কোন এসাইনমেন্ট দিলে তা যথা সময়ে সম্পন্ন করে না।
  • ক্লাসে মোটামুটি পারফর্ম্যান্স দেখালেও পরীক্ষায় ভাল মার্ক ওঠাতে ব্যর্থ হয়।

শিক্ষার্থী দুর্বল হয়ে যায় যেভাবে

অনেক সময় দেখা যায় অনেক ভাল শিক্ষার্থী পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ে। তারা বিভিন্ন কারনে নিজেদের গতিবিধি ঠিক রাখতে পারে না। চলুন আমরা জেনে নিই, কেন একজন শিক্ষার্থী দুর্বল হয়ে যায়? পর্যায়ক্রমে আমরা দেখবো, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় অর্থাৎ একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায়?
কোন পদ্ধতিগুলো আমাদেরকে ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার জন্য সহায়তা করবে? শিক্ষার্থী দুর্বল হওয়ার জন্য অনেকগুলো কারন থাকলেও নিচে মূল কারনগুলো তুলে ধরা হলো।
  • সঠিক এবং উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী দুর্বল হয়ে যায়।
  • অভিভাবকদের অবহেলা শিক্ষার্থী দুর্বল হওয়ার অন্যতম কারণ।
  • ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে না তোলা।
  • মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়ার জন্য যে পথ অবলম্বন করার দরকার তার সঠিক গাইডলাইন ছোটবেলা থেকেই না দেওয়া।
  • ছোটবেলা থেকে শিক্ষার প্রতি ঝোঁক তৈরী করার পরিবর্তে অর্থের প্রতি আসক্ত করা। অনেক ক্ষেত্রে এটা পরোক্ষভাবে হয়ে যায়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকরা কম সচেতন হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই তাদের সন্তানদের অর্থের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
  • সঙ্গ দোষে শিক্ষার্থী দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় খারাপ সঙ্গীর প্রভাব শিক্ষার্থীকে দুর্বল করে ফেলে।
  • অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী দুর্বল হয়ে পড়ছে। 

আদর্শ শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য

আচ্ছা বুঝলাম, এবার কি বলবেন যে আদর্শ ছাত্রের কেমন বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার? একজন আদর্শ ছাত্রের মাঝে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা আবশ্যিক।
  • রুটিন মাফিক পড়াশোনা করে।
  • পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন ও শিক্ষাগুরুর সাথে সদাচরন করে।
  • সময়ের কাজ সময়ে সম্পন্ন করে। শিক্ষক কর্তৃক তাদের কোন এসাইনমেন্ট দিলে তা শতভাগ সম্পন্ন করে।
  • বিভিন্ন নেশা দ্রব্য থেকে নিজেকে দূরে রাখে। 
  • কারো বিপদে সহায়তার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।
  • পর-সমালোচনার পরিবর্তে আত্ম-সামালোচনা করে নিজের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করে।
এবার আমরা শিক্ষার্থীর দুর্বলতা কাটানোর উপায়গুলো আলোচনা করবো। অর্থাৎ একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় সেই সম্পর্কে আলোকপাত করবো। তো বন্ধুরা, অনেক কথা হয়ে গেছে চলুন ভালো ছাত্র হওয়ার সেরা উপায়গুলো কি কি আমরা এবার জেনে নিই।

একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায়?

১। পিতামাতাকে সচেতন হওয়াঃ আপনি যদি চানতে চান, একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় তবে এ বিষয়ে পিতা-মাতার সচেতনতা কিন্তু অগ্রগন্য। অভিভাবকের সচেতনাতায় একজন দুর্বল ছাত্রের দুবর্লতা কাটিয়ে ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে। সুতরাং অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের প্রতি সচেতন হউন। 

২। শিক্ষকদের দুর্বল ছাত্রদের সনাক্ত করে তাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়াঃ আমাদের সন্মানিত শিক্ষক মহোদয় যদি দুর্বল শিক্ষার্থীদের সনাক্ত করে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করে তবে কিন্তু একজন দুর্বল শিক্ষার্থী ভাল শিক্ষার্থীতে পরিণত হতে পারে। সুতরাং একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের ভূমিকা অনেক বেশি।

৩। শেখানোর জন্য ব্যতিক্রমী কৌশল অবলম্বন করাঃ গতানুগতিক ধারায় না বুঝিয়ে শিক্ষার্থীরা যেভাবে বুঝতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।

৪। নতুন নতুন পরিকল্পনা তৈরী করাঃ কোন কিছু করার আগে তার উত্তম পরিকল্পনা করলে তাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আমাদের মধ্যে পরিকল্পনার অভাব হলে আমরা কিন্তু মাঝপথেই থেমে যেতে পারি। তাই একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় এ প্রসঙ্গে নতুন নতুন পরিকল্পনা করে নিতে হবে। তবেই দুর্বলতা কাটানো সম্ভব হতে পারে।

৫। ছাত্রের কাজের ন্যূনতম মূল্যায়ন করাঃ একজন দুর্বল ছাত্র যে কাজ করে তার প্রতি ন্যূনতম মূল্যায়ন আমদের দেওয়া উচিত। আর সেই সাথে কাজের মধ্যে তার কি ধরণের ভুল রয়েছে সেগুলো সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। এতে করে একজন দুর্বল শিক্ষার্থীর দুর্বলতা কাটানো যেতে পারে।

৬। কেন তারা আসল শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে তা খতিয়ে দেখাঃ আমাদের সর্বদা মাথায় রাখতে হবে একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায়? তবেই কিন্তু তাদের দুর্বলতার বিষয়গুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। ফলে কেন তারা আসল শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে তা বোঝা যাবে। আশা করছি বিষয়টি বুঝতে পারছেন। 

৭। আলাদা ব্যাচ করে পড়ানোঃ অনেক সময় দেখা যায় কোন বিষয় দুর্বল শিক্ষার্থীরা সহজে আয়ত্ত করতে পারে না। ফলে তারা অন্যান্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। এরুপ ক্ষেত্রে, একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় বলতে পারেন কি? তাদেরকে আলাদা করে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হলে তারা বিষয়টি হয়তো সহজে অনুধাবন করতে পারে।

অনেক শিক্ষার্থী; শিক্ষক কি বলবে, অন্যরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে কি না, এই ভেবে শিক্ষকদেরকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকে। তবে তাদেরকে যদি আলাদা কোন ব্যাচ-এ পড়ানো হয় তখন কিন্তু তারা সহজেই প্রশ্ন করতে পারে। ফলে তাদের দুর্বলতা কাটানো সম্ভব হতে পারে। সুতরাং অভিভাবক হিসেবে আমাদের উচিত দুর্বল শিক্ষার্থীদের আলাদা ব্যাচের ব্যবস্থা করা। 

৮। সবর্দা পজিটিভ চিন্তা করাঃ কোন কিছু করার আগে আমাদের পজিটিভ চিন্তার পাশাপাশি কিন্তু নেগেটিভ চিন্তাও করে নিতে হয়। তবে শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু ভিন্ন। এই যেমন ধরুন, কোন শিক্ষার্থী স্কুলের কোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করলো। কিন্তু সে সফল হতে পারলো না।
তাহলে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে নিয়ে কি ধরণের কটাক্ষ করবে এই ভেবে অনেকেই একটা লজ্জাঃকর মনোভাব তৈরী করে নেয়। এরূপ চিন্তা করা কিন্তু মোটেই কাম্য নয়। এমন চিন্তা করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় এটা ভালভাবে বুঝতে হলে সর্বদা পজিটিভ চিন্তা মাথায় নিতে হবে। 

৯। প্রাইভেট শিক্ষকের ব্যবস্থা করাঃ আপনি যদি দেখেন আপনার সন্তান একটু কম বোঝে, আর একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় এই নিয়ে চিন্তা করেন তবে আপনাকে অবশ্যই আপনার সন্তানের ভালো ছাত্র/ছাত্রী হওয়ার স্বার্থে বিষয় ভিত্তিক প্রাইভেট শিক্ষকের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে আপনার সন্তান জটিল বিষয়গুলোকে সহজেই আয়ত্তে আনতে সক্ষম হবে।

১০। পড়ালেখার প্রতি উৎসাহিত করাঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় দুর্বল শিক্ষার্থীরা লেখা পড়ার প্রতি অনুৎসাহী হয়ে থাকে। তাদেরকে লেখা পড়ার মূল মর্মার্থ সম্পর্কে সঠিক গাইডলাইন দিলে তারা এর প্রতি উৎসাহী হতে পারে। তাদের আগ্রহকে বাড়িয়ে তোলার জন্য তাদের কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান করতে হবে। 

১১। ছোট পরিসরে এসাইনমেন্ট দেয়াঃ দুর্বল শিক্ষার্থীদের যখন বড় কোন এসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে দেয়া হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা বিব্রত হয়ে যায়। অথচ তাদেরকে যদি ছোট কোন এসাইনমেন্ট করতে দেয়া হয় এবং সেই সাথে সম্পন্ন করার জন্য সঠিক গাইডলাইন দেয়া হয় তবে তারা সেটা অনায়াসেই করে দিতে পারে। সুতরাং দুর্বল ছাত্রকে ভাল করার জন্য ছোট পরিসরে এসাইনমেন্ট দেয়া উচিত।

১২। ক্লাসের প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করার ব্যবস্থা করতে হবেঃ এটা প্রায়ই দেখা যায় যে, দুর্বল শিক্ষার্থীরা ক্লাসের প্রতি অমনোযোগী থাকে। তাদের মনোযোগ ফিরে আনার জন্য ফ্রেন্ডলী ক্লাস নিতে হবে। সেই সাথে মাঝে মাঝে মজার আর শিক্ষনীয় কিছু গল্প তুলে ধরতে হবে। আশা করা যায় এতে করে একজন দুর্বল শিক্ষার্থী ভাল হয়ে যেতে পারে। 

১৩। তাদের জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে অবহিত করতে হবেঃ একজন আদর্শ ছাত্র তার জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত হলেও একজন দুর্বল ছাত্র কিন্তু তার উল্টো। তাহলে একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় বলুন?  তার জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সে উদাসীন। তাই তার উদাসিনতা কাটানোর জন্য তার জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে তাকে অবহিত করতে হবে। 

১৪। উদাহরণসহ বুঝিয়ে দেওয়াঃ অনেক সময় দুর্বল শিক্ষার্থীরা সহজে কোন আলোচনা বুঝতে পারে না। ফলে তাদেরকে উদাহরণসহ বুঝিয়ে দিলে তারা সহজেই বুঝতে পারে। যে সকল ক্ষেত্রে উদাহরণ প্রয়োগ করা যায় সেক্ষেত্রে উদাহরণ ‍দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন। আশা করছি তাতে করে একজন দুর্বল শিক্ষার্থী ভাল হতে পারে। 

১৫। রুটিন মাফিক পড়ার ইঙ্গিত প্রদান অতপর ব্যবস্থা গ্রহনঃ রুটিন মাফিক কোন কিছু করা সত্যিকার অর্থেই আমাদের জন্য ভাল ফলাফল দেয়। আমরা যদি কোন দুর্বল শিক্ষার্থীকে রুটিন মাফিক পড়ার জন্য উৎসাহিত করি তবে সে তার দুর্বলতা কাটিয়ে ভাল ছাত্র হতে পারে। সুতরাং আমাদের উচিত দুর্বল ছাত্রকে সঠিক গাইডলাইন দেওয়া যাতে করে সে রুটিন মাফিক পড়াশুনা করে।

১৬। শিক্ষকদের সাথে সদাচরণ করার মানসিকতা তৈরী করাঃ যারা ভাল ছাত্র হয় তারা সচরাচর তাদের শিক্ষকদের সাথে ভাল আচরণ করে। শিক্ষকদের সকল আদেশ পালন করে। কিন্তু যারা দুর্বল হয় তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই কিন্তু শিক্ষকদের সাথে ভাল আচরণ করে না।

তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে তাদের মানসিকতার যেন উন্নয়ন ঘটে। শিক্ষকদের প্রতি তারা যেন ভাল আচরন করে সেদিকে নজর দিতে হবে। আশা করছি একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় এ বিষয়ে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। আরো জানার জন্য পোস্টটি পড়তে থাকুন। 

১৭। সহপাঠীদের সাথে ভাল ব্যবহার করাঃ দুর্বল শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীদের সাথেও মূলত ভাল ব্যবহার করে না। ফলে বন্ধুদের সাথে তাদের খুব একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। তাই আমাদের উচিত হবে দুর্বল শিক্ষার্থীকে তাদের সহপাঠিদের সাথে ভাল ব্যবহার করার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া। তাতে করে দুর্বল শিক্ষার্থী ভাল ছাত্রে পরিণত হতে পারে। 

১৮। স্কুলের বিশেষ বিশেষ প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করাঃ ভাল শিক্ষার্থীদের আর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা স্কুলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করে। অপরদিকে যারা দুর্বল শিক্ষার্থী তারা কিন্তু এসব করতে অনাগ্রহী। এতে করে তাদের মেধা বিকশিত হওয়ার পরিবর্তে অবরুদ্ধ হয়। এরূপ ক্ষেত্রে আমাদের উচিত তাদেরকে স্কুলের বিশেষ বিশেষ প্রোগ্রামসহ সকল প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া। 

১৯। বিনয়ী হওয়ার পরামর্শ দেওয়াঃ দুর্বল শিক্ষার্থীদের আর একটি সমস্যা হলো এরা বিনয়ী হয় না। বড়দের সন্মান করে খুব কম আর ছোটদের স্নেহ করে না বললেই চলে। একজন আদর্শ ছাত্র হতে গেলে তাকে যে বিনয়ী হতে হবে এ বিষয়ে বোঝানো উচিত। 

২০। দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলাঃ কাজের প্রতি অবহেলা না করে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই, এই বিষয়টি দুর্বল শির্ক্ষাীদের মাঝে নেই। তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত নয়। ফলে ভালো ছাত্রের তুলনায় তারা কয়েকধাপ পিছিয়ে। তাই দুর্বল ছাত্রের দুর্বলতা কাটানোর জন্য আমাদের উচিত তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।

২১। কঠিন ধৈর্য ধারণ করার মানসিকতা তৈরী করাঃ জীবন মানেই যন্ত্রনার আর এক নাম। তাই বলে কি আমরা সমস্যার সময় নিজেকে নিয়ে ভেঙ্গে পড়বো। যারা দুর্বল ছাত্র হয় তারা অল্পতেই ভেঙ্গে পড়ে। কোন কিছু না বুঝতে পারলে মনে করে এসব তার দ্বারা হবে না। এমন অবস্থায় একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায়? তাদেরকে সঠিক গাইডলাইন দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে যে ধৈর্য ছাড়া সফল হওয়া যায় না। তাই তাদের পর্যাপ্ত ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

২২। মনোযোগ দিয়ে কিছু অনুধাবন করাঃ ক্লাসের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করানো দুর্বল ছাত্রের দুর্বলতা কাটানোর অনন্য উপায় হতে পারে। তাদের নিজস্ব বুদ্ধি খাটিয়ে তারা যেন কিছু করে সেই বিষয়ে তাদের ইঙ্গিত প্রদান করতে হবে। তাদেরকে অনুধাবন করার মত পরিবেশ তৈরী করে দিতে হবে। তবেই তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে তারা ভাল ছাত্র হতে পারে।

২৩। গ্রুপভিত্তিক পড়ার ব্যবস্থা করাঃ একা একা পড়লে অনেক সময় অনেক কিছু বুঝতে অসুবিধা হয়। এ সময় যদি কয়েকজন মিলে এক সাথে পড়ার ব্যবস্থা করা হয় তবে মজার মধ্য দিয়ে পড়া আয়ত্তে চলে আসে। এভাবেও দুর্বল ছাত্রের দুর্বলতা কমে যেতে পারে। ফলে সে ভাল ছাত্র হওয়ার প্রয়াস পায়।

২৪। মিতব্যয়িতা সম্পর্কে ধারণা প্রদানঃ আমাদের আয় বুঝে ব্যয় করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল ছাত্র এটা ভুলে যায়। আর তাই সে বেশি পরিমাণ খরচ করে ফেলে। এমন অবস্থায়, একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায়? কেননা অতিরিক্ত খরচ করার ফলে তাকে টেনশন করতে দেখা যায়। অথচ সে যদি মিতব্যায়ী হতো তবে এরূপ সমস্যা তার কখনোই হতো না। তাই দুর্বল শিক্ষার্থীদের মিতব্যায়িতা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। 

২৫। শৃঙ্খলা বজায় রাখাঃ অনিয়মিত কোন কিছুই আমাদের জন্য ভাল নয়। আমরা সচরাচর চাই শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে আমাদের সব কিছু হউক। শৃঙ্খলা বজায় রেখে চললে আমরা হয়তো অনেক বিপদ থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারি। শৃঙ্খলার বিষয়ে দুর্বল ছাত্রের মাঝে জ্ঞানের ঘাটতি থাকতে পারে। তাই তাকে এসব বিষয়ে সঠিকভাবে বুঝাতে হবে। 

২৬। নিজের কাজের মূল্যায়ন করাঃ অনেক সময় দুর্বল শিক্ষার্থীরা তাদের নিজের কাজের মূল্যায়ন করতে পারে না। ফলে সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজকেও হালকাভাবে নেয়। এ অবস্থায় তার নিজের প্রতি এবং সেই সাথে কাজের প্রতি অনীহা লক্ষ্য করা যায়। তাই তাদেরকে বোঝানো উচিত যে নিজের কাজের প্রতি মূল্যায়ন করা উচিত। 

২৭। আত্মসমালোচনার প্রতি নজর দিতে হবেঃ দুর্বল ছাত্র প্রায় সময়ই অন্যের সমালোচনায় বিভোর থাকে। এর মাঝে সে আলাদা এক মজা পায়। কিন্তু এটা তাকে আরো দুর্বল করে তুলে এ বিষয়ে সে বেমালুম ভুলে যায়। তাই তাদের পরসমালোচনার দিকে নজর না দিয়ে আত্মসমালোচনার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা দরকার। এতে করে দুর্বল শিক্ষার্থী তার ভুল বুঝতে পারবে এবং নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারে। 
একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় শীর্ষক আজকের আলোচনায় উপরের বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়া উচিত। এছাড়াও একজন দুর্বল শিক্ষার্থীর দুর্বলতা কাটানোর জন্য অর্থাৎ ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য নিচের কাজগুলো করা উচিত। 
২৮। যথারিতী লাইব্রেরীতে গিয়ে বই বড়ার মানসিকতা তৈরী করা।
২৯। নিয়মিত চর্চা করার মানসিকতা তৈরী করার পরামর্শ প্রদান। 
৩০। সর্বদা সত্য বলার চেষ্টা করতে হবে।
৩১। অর্থের পিছনে না ছুটে বরং দক্ষতা অর্জনের জন্য আগ্রহী করে তোলা।
৩২। নিজের ব্যালেন্স বুঝে চলা। কেননা একজন ছাত্রের উপর অনেক দায়িত্ব থাকে। সেগুলোর প্রতি নজর দিয়ে ভারসাম্য বজায় যেন রাখতে পারে সেই বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া।
৩৩। শিক্ষার্থীদের অভাব বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান দিতে হবে। অভাবের সময় নিজেকে কিভাবে টিকিয়ে রাখতে হয় তার বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।
৩৪। জটিল টাইপের না হয়ে সহজ সরল জীবন-যাপন করার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া।
৩৫। তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে।
৩৬। ওয়াদার প্রতি যথেষ্ট যত্নবান হতে হবে। ওয়াদা করলে তা পালনে সচেষ্ট হতে হবে। 
৩৭। ছাত্র জীবনের শুরুতেই নিজের লক্ষ্য নির্ধারন করে নিতে হবে।
৩৮। সময়ের কাজ সময়ে যেমন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা, দিনের সকল কাজ কিভাবে করবে তার পরিকল্পনা করা।
৩৯। না বুঝে কোন কিছু মুখস্ত করা যাবে না। অর্থাৎ সকল পড়া বুঝে বুঝে পড়তে হবে। 
৪০। সমস্যার দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করা। কোন বিষয়ে সমস্যায় পড়লে কিভাবে তা দ্রুত সলভ করতে হয় তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হবে। 
৪১। নিয়মানুবর্তিতা ঠিক রাখতে হবে। 
৪২। কোন প্রকার নেশা গ্রহনে আসক্ত হওয়া যাবে না। 
৪৩। অকল্যাণকর কোন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। 
৪৪। রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য ইঙ্গিত প্রদান করতে হবে।
৪৫। অনলাইন গেইম যেমন ফ্রি ফায়ার, পাবজিসহ সকল ধরণের ক্ষতিকর গেইম থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। 
৪৬। যথেষ্ট পরিমাণ শেখার সুযোগ তৈরী করে দিতে হবে। সেটা হতে পারে পারিবারিক কিংবা অর্থনৈতিক।
৪৭। ক্লাসে বসার সময় সামনের সারিতে বসানোর ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কেননা সামনে থাকা শিক্ষার্থীরা শতভাগ শিক্ষকের নজরে থাকে। 
৪৮। শিক্ষার্থীর পাশপাশি শিক্ষককেও সহনশীল হতে হবে। প্রহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্বোপরি তাকে বোঝানোর জন্য সকল প্রচেষ্টা প্রয়োগ করতে হবে।
৪৯। শিক্ষার্থী যদি বয়ঃসন্ধিকালে উপনীত হয় তবে এ সময়ের পরিবর্তন সম্পর্কে তাদের বুঝাতে হবে। 
৫০। অভিভাবক, শিক্ষক, পাড়া প্রতিবেশীসহ সকলকে শিক্ষার্থীর প্রতি সদয় হতে হবে। তারা ভুল করলে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। যাতে তারা তাদের ভুলগুলো সংশোধন করতে পারে সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।

পরিশেষে,

আশা করছি, একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি কিভাবে করা যায় এ বিষয়ে আপনি পুরোপুরি ধারণা পেয়েছেন। উপরের আলোচনার বাইরে আপনি যদি কোন নতুন তথ্য জেনে থাকেন যে কিভাবে একজন দুর্বল ছাত্রের উন্নতি করা যায় তবে কমেন্ট করে জানাবেন কেমন! সকলের সু-স্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ। ২৪৬১৪

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

তৌহিদ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url