লাউ চাষের পদ্ধতি - লাউয়ের উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আপনারা যারা লাউ চাষের পদ্ধতি এবং লাউয়ের  উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চচ্ছেন তাদের জন্য আমাদের এই আজকের আর্টিকেলটি। আজকের এই আর্টিকেলটা আমরা আলোচনা করব লাউ চাষের পদ্ধতি কি এবং লাউয়ের উপকারিতা নিয়ে । আজকের আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়লেই বুঝতে পারবেন লাউ চাষের পদ্ধতি কি এবং লাউয়ের উপকারিতা সম্পর্কে ।



 পোস্ট সূচিপত্রঃ লাউ চাষের পদ্ধতি -লাউয়ের উপকারিতা

  • সবজি চাষের ক্ষেত্রে সাধারণ তথ্য
  • লাউ চাষের পদ্ধতি
  • লাউ গাছের পরিচর্যা 
  • লাউ গাছে সারপ্রদান
  • হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি
  • বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি 
  • গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষ পদ্ধতি
  • ছাদে লাউ চাষ পদ্ধতি
  • লাউয়ের উপকারিতা 

সবজি চাষের ক্ষেত্রে সাধারণ তথ্য

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো সবজি চাষের ক্ষেত্রে সাধারণ তথ্য ।যেকোন সবজি চাষের ক্ষেত্রে প্রথমে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে কারণ হলো সবজির চাষ অনেক পরিশ্রমের একটি কাজ সেজন্য আপনি যদি পরিশ্রমী এবং আগ্রহী না হয়ে থাকেন তাহলে সবজি চাষে আপনি কখনোই লাভবান হতে পারবেন না সেই জন্য আপনাকে যে সকল বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন সেগুলো হচ্ছে আপনি যে সবজি চাষ করতে চাচ্ছেন সে সবজি সম্পর্কে আপনি নিজে কতটা জানেন এবং আপনাকে সাহায্য করার মত কেউ আছে কিনা।

দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হচ্ছে আপনি যে সবজিতে চাচ্ছেন সেই সবজিটার বাজারে চাহিদা কেমন। সবজি চাষ করতে চাচ্ছেন সেই সবজি তাদের কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তি আছে যে আপনাকে পরামর্শ দিতে পারে। আপনি যে জায়গাটিতে সবজি চাষ করতে চাচ্ছেন সেই জায়গাটি কি চাষের জন্য অনুকূলে আছে কিনা এই সমস্ত বিষয় যদি আপনার জানা থাকে তাহলে আপনি সবজি চাষে সফলতা লাভ করতে পারবেন।

লাউ চাষের পদ্ধতি 

লাউ এমন একটি সুস্বাদু সবজি যেটি বাংলাদেশের প্রায় মানুষই খেয়ে থাকে। লাউ সব মাটিতেই ভালো হয় সেজন্য বাংলাদেশের সব জায়গাতেই কম বেশি লাউয়ের চাষ হয় । লাউ গাছের পাতা সবুজ আর নরম হয় সেই জন্য লাউয়ের চেয়ে লাউয়ের ডগা ভাজি করে খাওয়া যায় আর লাউ রান্না এবং ভাজি করে খাওয়া যায় । লাউ এর চেয়ে লাউয়ের শাকের পুষ্টি বেশি। লাউ চাষ করার ক্ষেত্রে আপনাকে একটা বিষয়ে সবসময় মাথায় রাখতে হবে আপনার এলাকায় কোন ধরনের লাউয়ের চাহিদা বেশি লম্বা না গোল লাউয়ের চাহিদা বেশি ।


যেহেতু লাউ সারা বছর চাষ করা যায় সেজন্য আমাদের প্রথমে লাভের চারা দিয়ে নিতে হবে । লাভের চারা দেওয়ার জন্য আমাদের প্রথমে লাউয়ের বীজ সংগ্রহ করতে হবে এবং চারা দেওয়ার জন্য পলিব্যাগ সংগ্রহ করতে হবে। তারপর পলিব্যাগে মাটি দিয়ে ভর্তি করতে হবে । যেহেতু লাউয়ের বীজ শক্ত সেজন্য ১০ থেকে ১৫ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে অথবা ১% হারে পটাশিয়াম নাইট্রেট পানির সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘন্টা অথবা এক দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে। 

লাউয়ের চারা দেওয়ার জন্য পলিব্যাগের প্রয়োজন হয় তার মাপ হল ৮*১০ সাইজের। গোবর এবং মাটি একসাথে মিশাতে হবে এবং চারা দেওয়ার জন্য ভর্তি হবে একটি অথবা দুটি বীজ দিতে হবে যেহেতু লাউয়ের বীজ শক্ত সেহেতু চারা গজাতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ দিন । তারপরে সেই চারা গুলোকে জমিতে লাগানো যায় ।

লাউ গাছের পরিচর্যা

প্রিয় পাঠক আপনারা যারা লাউ গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য আমাদের এই আজকের আর্টিকেলটি আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে আমাদের এই আজকের আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে আপনার সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে । চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে লাউ গাছের পরিচর্যা করা যায়। যখন লাউ গাছের ১৫ থেকে ১৬ দিন হয়ে যাবে তখন আমরা লাউ গাছকে চাষের জমিতে বপন করতে পারব । 

লাউ গাছের বয়স যখন২০ থেকে ২৫ দিন হবে তখন আমরা রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে পারি।আমরা লাউ গাছ লাগানোর জন্য যে বেড করব তার একটি থেকে আরেকটি দূরত্ব হবে ১০ থেকে ১২ মিটার। আর গাছ প্রতিটি বেডের চারপাশে দুই ফুট করে জায়গা করে নিতে হবে সার দেওয়ার জন্য।আর গাছের গোড়া সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে কেননা আগাছা থাকলে গাছের গাছের শক্তি কমে যাই  আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। তারপরে লাউ গাছটিকে জানালায় তুলে দিতে হবে যাতে লাউ গাছটি সূর্যের আলো এবং বাতাসে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে ।যখন লাউ গাছে ১০ থেকে ১২টা পাতা দেখা দিবে তখন লাউয়ের ডোগা কেটে দিতে হবে তাহলে দেখা যাবে কিছুদিনের মধ্যে লাউ গাছে ছেলে ফুলের দেখা যাচ্ছে তার কিছুদিন পরে গাছে আবার ডুবে কেটে দিতে হবে তাহলে তখন আমরা দেখতে পাবো গাছের মেয়ে ফুলের দেখা যাচ্ছে তারপরে এইভাবে কিছুদিন পর পর যদি লাউ গাছের ডুকা কেটে দেয়া যায় তাহলে দেখা যাবে অধিক পরিমাণে লাউ পাবেন এবং অধিক লাভবান হতে পারেন।

লাউ গাছে সারপ্রদান

প্রিয় পাঠক এখন আমরা আলোচনা করব লাউ গাছে সারপ্রদান সম্পর্কে ।আমরা লাউ গাছ লাগানোর জন্য যে বেড করব তার একটি থেকে আরেকটি দূরত্ব হবে ১০ থেকে ১২ মিটার। আর গাছ প্রতিটি বেডের চারপাশে তুই ফুট করে জায়গা করে নিতে হবে সার দেওয়ার জন্য। লাউ গাছের বয়স যখন২০ থেকে ২৫ দিন হবে তখন আমরা রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে পারি।লাউ গাছের গোড়ায় যখন প্রথম পর্যায়ে সার প্রদান করা হয় তখন আমরা তিন ধরনের সার প্রদান করতে পারি 

(১) ড্যাব/ টি এস পি (২)এম ও পি (৩) পুরাডান। (১) ৫০গ্রাম ড্যাব সার প্রয়োগের ফলে গাছের ফসফরাস ও নাইট্রোজেনের অভাব দূর করে। (২)৫০গ্রাম এম ও পি গাছের নাইট্রোজেনের অভাব দূর করে।(৩)৫০গ্রাম পুরাডান যেটি গাছের সকল পোকামাকড় এবং বিভিন্ন প্রকার রোগ থেকে রক্ষা করে। তারপরে আমরা যেটি দিব সেটি হল আমাদের বাড়িতে তৈরি গোবর কম্পোস্ট সার যেটি গাছের জন্য অনেক উপকারী প্রত্যেকটি গাছে এক থেকে দুই কেজি পরিমাণে গোবরের সার দিতে হবে ।

হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি

প্রিয় পাঠক আমরা আগেই আলোচনা করেছি কিভাবে লাউয়ের চারা এবং লাউ গাছের পর্যবেক্ষণ করা যায় । এখন আমরা জানাবো হাইব্রিড লাউ চাষের পদ্ধতি। সাধারণ লাউ চাষের মতই একইভাবে হাইবিড লাউ চাষ করা যায়। শুধু হাইব্রিড লাউ চাষ করার প্রধান কারণ হলো হাইব্রিড লাউ চাষে অধিক পরিমাণ লাভ পাওয়া যায় যার ফলে অধিক করা যায় । আমরা যে সকল হাইব্রিড লাইট চাষ করতে পারি নিম্নে সে সকল বীজের নাম গুলো দেওয়া হল
  • ইস্পাহানি গ্রুপের সুলতান নবাব সম্রাট বাদশাহ
  • এ সি আই গ্রুপের হাইব্রিড লাউ ময়না
  • লাল  তীর গ্রুপের
  • সুপ্রিম সিড কোম্পানির গ্রিন ম্যাজিক
  • রওনক কোম্পানির মার্শাল সপুরা
  • এছাড়াও রয়েছে হাজারী লাউ
প্রিয় পাঠক আপনারা তাহলে বুঝতে পারলেন হাইব্রিড চাষ আমরা কেন করব হাইব্রিড লাউ চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায় এবং অধিক মুনাফা লাভ করা যায় সেই জন্য আমরা হাইব্রিড লাউ চাষ করবো।

বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি 

প্রিয় পাঠক আপনারা যারা বারোমাসি লাউ চাষ করতে চান তাদের জন্য আমাদের এই আজকের আর্টিকেলটি। আজকের আর্টিকেলটি আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে বারো মাস কিভাবে লাউ চাষ করতে পারবেন সে বিষয়ে আপনার সম্পূর্ণ ধারণা হয়ে যাবে । যদিও লাউ শীতকালীন সবজি তবুও সারা বছর লাউ চাষ করা যায় সেজন্য আপনার সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে আপনার জমি নির্বাচন করা । শীতকালের জন্য বেলে দোআঁশ মাটি এবং গ্রীষ্মকালের জন্য দোআঁশ মাটি ।

শীতকালে পানি শোষণ ক্ষমতা কম হয় এবং গ্রীষ্মকালে পানির বেশি প্রয়োজন সেজন্য দোআঁশ মাটির প্রাণীর ধারণ ক্ষমতা বেশি সেজন্য দোআঁশ মাটিতে লাউ চাষ করা হয় । এখন আমি বলব সারা বছর লাউ চাষের জন্য কোন বীজ সবচেয়ে ভালো বি ইউ হাইবিট লাভ ১ যেটি প্রতি চার মাস অন্তর অন্তর চারা দিয়ে চাষ করা যায় বি ইউ জাতের বীজ বপন করতে হয় সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে এবং ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া শুরু হয় আর একটি গাছে ২৫ থেকে ৩০ টি লাউ ধরে ।

গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষ পদ্ধতি

আমাদের দেশে বর্তমানে লাউ চাষ সারাবছরই করা হচ্ছে তেমনি গ্রীষ্মকালেও লাউ চাষ করা হয় গ্রীষ্মকালে যে সকল জাতির লাউ চাষ করা হয় সেগুলো হল গ্রিন ডায়মন্ড/গ্রিল লেডি//ডায়না/বাড়ি লাউ-৪ এই সকল জাতের লাউ আমরা গ্রীষ্মকালে চাষ করতে পারি। গ্রীষ্মকালে লাউ চাষ করার জন্য আমাদেরকে দোআঁশ মাটির জমি নিলে ভালো হয় । কেননা দোআঁশ মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা বেশি। আর গ্রীষ্মকালে লাউ চাষ করার জন্য লাউ গাছে পাঁচ থেকে সাত দিন পর পর সেচ দিতে হয় এবং স্প্রে করতে হয় কারণ গ্রীষ্মকালে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়।

ছাদে লাউ চাষ পদ্ধতি

ছাদে লাউ চাষ করার জন্য আমরা টব বা একটি ড্রামকে কেটে দুই খন্ড করে ব্যবহার করতে পারি ।ড্রামটির নিচে ছোট ছোট কয়েকটি ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি হলে সেটা নিচ দিয়ে বের হয়ে যায় । তার পরে ডামে দোআঁশ  এবং বেলে দোআঁশ মাটি দিয়ে ভর্তি করে দিতে হবে। তারপর সেখানে গোবর এবং ১০০ গ্রাম টিএসপি 50 গ্রাম পটাশ  এবং ৫০ গ্রাম পুরাডান সার দিতে হবে ।

এবার পানি দিয়ে কিছুদিন রেখে দিন তার কয়েকদিন পর সেখানে চারা রোপন করুন তারপর চারা দেওয়ার পর থেকে  বের হওয়ার পর নিয়মিত পানি দিতে হবে যাতে গাছের মাটি শুকিয়ে না যায়।সঠিকভাবে গাছের পরিচর্যা করলে ছাদে লাউ চাষ করেও আপনি অধিক মুনাফা লাভ করতে পারেন।

লাউয়ের উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আপনারা সকলের লাউয়ের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে অবাক হয়ে যাবেন । লাউয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণ পানি যার শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। ডায়রিয়াজনিত এবং পানি শূন্যতা জনিত রোগের এটি কার্যকর। লাউ প্রসাবের সংক্রমণ রোধেও অনেক বেশি উপকারী। তাছাড়াও কিডনির ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে লাউ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। ওজন কমাতে সাহায্য করে। পেট ফাঁপা ও এসিডিটির সমস্যা সমাধানের কাজ করে। শরীর ঠান্ডা রাখে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

তৌহিদ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url